জাহাঙ্গীর হোসেন,পাবনা প্রতিনিধি:
ঈশ্বরদীর তালবাড়িয়া ডিগ্রির চরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে শুরু হয়ে রাত আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকুড়লিয়া গ্রামের নছিরের ঘাট ও আকাতের ঘাটের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এ গুলিবর্ষণ, মহড়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে মুহুর্মুহু শব্দে ঘুমন্ত গ্রামবাসী জেগে উঠে ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।শনিবার (১৫ মার্চ) সকালেও দুই পক্ষের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া চলেছে। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। রাস্তায় প্রতিপক্ষের হামলার চরকুড়লিয়া গ্রামের মৃত আমিন মন্ডলের ছেলে (ক্ষুদ্রাকার বামন) সাহাবুল ইসলামসহ (৩৮) দুজন আহত হয়। এদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।চরকুড়লিয়া এলাকার জোতদার সাইদুর রহমান ও কুষ্টিয়া হরিপুর ইউনিয়নের মুকুল গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। দুই গ্রুপের মধ্যেই স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতা-কর্মী জড়িত রয়েছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতা-কর্মী খোলশ পাল্টে বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে চর এলাকায় প্রভাব বিস্তারে শক্তি প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, দুদিন আগে জেলার অন্যতম বৃহৎ লক্ষ্মীকুন্ডার তালবাড়িয়া সরকারি খাস জমি প্রকাশ্যে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা দেওয়ার পর থেকে এলাকায় খাসজমি বণ্টন ও আধিপত্য নিয়ে সাইদুর ও মুকুল গ্রুপের সঙ্গে দৃশ্যমান দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এরই জের ধরে শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঈশ্বরদী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দুরে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের নছিরের ঘাট ও আকাতের ঘাট এলাকায় দুই পক্ষ মহড়া দিতে শুরু করে। এরপর রাত ১২টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত দুইপক্ষই গুলিবর্ষণের মত বিকট শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী জানান, শব্দ এত প্রকট ছিল যে, আমরা ভয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। শব্দ শুনে মনে হয়েছে এগুলো গুলি ও ককটেলের শব্দ। তিনি আরও জানান, লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে গোলাগুলি, মারামারি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং দখলের মূল কারণ ডিগ্রিরচর তালবাড়িয়ার খাস ভূমি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের দখলে চরের এসব সরকারি খাস জমি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে এক বছরের জন্য প্রকাশ্য নিলামে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা প্রদানের পর থেকেই স্থানীয় একাধিক পক্ষের মধ্যে এটা নিয়ে বিরোধ চলছে।লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের বিট পুলিশিং এর ইনচার্জ (এসআই) জামাল মিয়া জানান, খবরের পেয়ে তিন গাড়ি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে খুঁজে পাইনি। তবে স্থানীয়রা আমাদের জানান যে, এলাকার প্রভাবশালী সাইদুর রহমান ও কুষ্টিয়ার মুকুল গ্রুপের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও আধিপত্য নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেও মুকুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মুকুলের প্রতিপক্ষ লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের সাইদুর রহমান জানান, রাতের ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং প্রতিপক্ষরা তাদের লোকজনকে চরে যেতে দিচ্ছে না।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সম্পর্কে শুনেছি। তবে এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, তালবাড়িয়া ডিগ্রির চরের জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে কি কারণে সেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তা জানা নেই। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এসিল্যান্ড।