কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণালঙ্কার।
চার মাস ১১ দিন পর আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে একে একে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। সেখান থেকে পাওয়া টাকা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নেয়া হয় এবং সেখানেই শুরু হয় গণনার কাজ।
গণনায় অংশ নেয় পাগলা মসজিদ মাদ্রাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ২৫০ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী—মোট ৩২০ জন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার এবং মসজিদ-মাদ্রাসার আরও ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও এ কাজে যুক্ত ছিলেন।
এর আগে, গত বছরের ৩০ নভেম্বর দানসিন্দুক খুলে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
জানা গেছে, প্রতি তিন থেকে চার মাস অন্তর দানবাক্সগুলো খোলা হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে দান করতে আসেন। অনেকের বিশ্বাস, এখানে দান করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। সে কারণেই দানের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
এই অর্থ দিয়ে ছয়তলা বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও আধুনিক ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে অর্ধলাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন, আর পাঁচ হাজার নারীর জন্য থাকবে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা চূড়ান্ত নকশা ও ডিজাইন জমা দিলে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা, তবে বাস্তবায়নের সময় এতে আরও খরচ বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানম জানিয়েছেন, দানের টাকার একাংশ মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় করা হয়, বাকি অর্থ ব্যাংকে রাখা হয়। এই তহবিল থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষদের সহায়তা করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায়, মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে ৩.৮৮ একর এলাকায় বিস্তৃত এই মসজিদ ও এর আশপাশে গড়ে উঠেছে আধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স। জেলার সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে এটি গর্বের এক প্রতীক।